ইমো টিপস

ইমু হ্যাক হয় কিভাবে? ইমু হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়।

প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো ইমু হ্যাক করে কিভাবে, ইমু হ্যাক হলে কী কী বিপদ হতে পারে, ইমু হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচার উপায় এবং ইমু হ্যাক হলে করণীয় কী?

তবে তার আগে চলুন ইমু হ্যাক করা নিয়ে একটি ঘটনা জেনে নেওয়া যাক।

জসিম মিয়া একজন সৌদি আরব প্রবাসী। কয়েকদিন আগে তার ইমোতে এক অপরিচিত আইডি থেকে কেউ একজন তাকে কল করে বলে, জসিম মিয়ার ইমো থেকে নাকি একটি ইমো গ্রুপ খোলা হয়েছে আর তার জন্য সেই ব্যক্তি বেশ বিরক্ত হচ্ছে।

জসিম মিয়াকে বলা হয়, সে যেন তাকে ইমো গ্রুপ থেকে বের করে দেয়। যাতে উক্ত গ্রুপের কেউ কোনো ম্যাসেজ দিলে বা কল করলে তার ইমোতে যেন না যায়।

জসিম মিয়া মোবাইল সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বুঝে না। আর সে নিজেও জানে না তার ইমো থেকে কীভাবে গ্রুপ খোলা হলো এবং ঐ ব্যক্তির ইমো নাম্বার তার ইমোতে কীভাবে যুক্ত হলো।

কয়েকদিন পর ঐ ব্যক্তি আবার তাকে কল করে। দুজনের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ আলাপচারিতা হয়। একপর্যায়ে একজন আরেকজনের সাথে কিছুটা পরিচিতও হয়।

ঐ ব্যক্তি তাকে জানায় তার ইমো ব্যবহার করে নাকি অন্য কেউ সেই গ্রুপ খুলেছে।

তাই সে জসিমকে বলে, “আমি ঐ ব্যক্তির ইমো নাম্বার দিচ্ছি আপনি তার সাথে যোগাযোগ করে জিজ্ঞেস করুন, সে কেন আপনার ইমো নাম্বার ব্যবহার করে গ্রুপ খুলেছে। এবং আপনি আরও বলুন আপনার নাম্বার ব্যবহার করে ইমো গ্রুপ খোলার কারণে অনেকেই আপনাকে ফোন দিচ্ছে।”

জসিম বলে, “ঠিক আছে আপনি তার ইমো নাম্বার পাঠান, আমি তার সাথে কথা বলবো।”

দুজনের মাঝে কথোপকথন কিছুটা এরকম:

জসিম: কই ভাই? ঐ লোকের নাম্বার তো আসলো না!

ঐ ব্যক্তি: এই যে ভাই, ম্যাসেজ দিলাম দেখেন।

জসিম: ম্যাসেজ তো একটা আসলো, দূর মিয়া! ফাইজলামি করেন? (রেগে গিয়ে) 2375 এটা আবার কেমন মোবাইল নাম্বার! আপনি তার মোবাইল নাম্বার পাঠান।

ঐ ব্যক্তি: আচ্ছা দেখতেছি ভাই।

☞ আরো পড়ুন:  ইমু অ্যাকাউন্ট ডিলিট করার উপায়। | ইমু আইডি ডিলিট করার নিয়ম।

এই কথা বলে সে কল কাটলো। আসলে জসিম মিয়ার ইমো অ্যাকাউন্ট যে সে তার মোবাইলে লগিন করে নিল জসিম তা বুঝতেও পারলো না!

একটি ইমো অ্যাকাউন্ট ২য় কোনো ডিভাইসে লগিন করতে গেলে বর্তমানে মোবাইল নাম্বারে পিন কোড (OTP) আসে না, আসে লগিন থাকা ইমোর ভেতর। যা ইমো অফিসিয়াল ভাবে পাঠায়।

আর তা অনেকেই জানে না। হ্যাকাররা এই সুযোগে ইমো গ্রুপের কথা বলে যা-তা বুঝিয়ে ইমো কোড নাম্বারটা নিতে পারলেই ইমু অ্যাকাউন্ট হ্যাক!

জসিম মুসলিম উদ্দিন নামের একজনের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতো। সে ইমোতে তাকে ভয়েস ম্যাসেজ দিয়ে টাকার কথা বলতো।

আর মুসলিম উদ্দিনের সাথে দেখা হলে পরে রিয়াল দিয়ে দিত। ইমো প্রতারক এই সুযোগটা নেয়।

প্রতারক তাদের (জসিম ও মুসলিম উদ্দিনের) পূর্বের ম্যাসেজগুলো থেকে ভয়েস সংগ্রহ করে একই ভয়েস আবার পাঠায়।

ভয়েসগুলো অনেকটা এরকম: “ভাই বিকাশে কত করে রেট দিচ্ছেন? আমি একটা নাম্বার পাঠিয়ে দেই আপনি এই নাম্বারে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিন। কই ভাই, টাকা তো এখনও গেলোনা!”

ইমো প্রতারক তার পূর্বের ভয়েস ম্যাসেজ আবার পাঠায় এবং তার নিজের বিকাশ নাম্বার পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু জসিম এ ব্যপারে কিছুই জানে না!

মুসলিম উদ্দিনও তার ভয়েস ম্যাসেজ শুনে টাকাগুলো পাঠিয়ে দেয়! পূর্বে যেমনটা পাঠাতো।

একই ভাবে সে (প্রতারক) আরও কয়েকজনকে ম্যাসেজ পাঠায় যেন তারা তাকে জসিম ভেবে টাকা পাঠিয়ে দেয়।

কিন্তু মুসলিম উদ্দিনের টাকা পাঠানোর কথা শুনে যখন জসিম বুঝতে পারে তার ইমু হ্যাক হয়েছে তখন সে পুরো ইমো অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেয়।

একই কোম্পানিতে কাজ করে আব্দুল মান্নান নামের একজন। তাকেও একজন প্রতারক ইমোতে কল করে বলে, তার (মান্নানের) ইমো আইডি থেকে নাকি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে।

প্রতারক তাকে আরও বলে, “আমি আপনার ইমো গ্রুপ থেকে বের হতে চাই। আর এর জন্য দেখেন আপনার ইমোতে ৪ সংখ্যার একটি নাম্বার ম্যাসেজ করা হয়েছে সেটা আমাকে বলুন।”

কিন্তু মান্নান তাকে সেই কোড নাম্বার দিতে রাজি হয়নি। তাই সে প্রতারক আর কোনো কথা না বলেই কল কেটে দেয়।

☞ আরো পড়ুন:  ইমুতে বন্ধুর পাঠানো মেসেজ পড়ুন আনসিন রেখেই, কীভাবে ইমুতে মেসেজ আনসিন রেখে পড়া যায়?

এভাবেই ইমো প্রতারক চক্র তাদের প্রতারণার কৌশল প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে সহজ সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

প্রশাসন অনেককে গ্রেফতারও করেছে। তবে শুধুমাত্র প্রশাসনের একার পক্ষ্যে সম্ভব না এসব ইমো প্রতারক চক্র রুখে দেওয়া। এর জন্য প্রয়োজন আমাদের সকলের সচেতনতা।

ইমু হ্যাক করে কিভাবে?

ইমো হ্যাকিং বলে প্রচলিত ঘটনাগুলোকে সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে ব্যবহারকারীদের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র তাদের ডিভাইসে অন্যের ইমো অ্যাকাউন্টটি লগিন করে নেওয়াকে বলে।

ইমো নিউ টিপস এন্ড ট্রিকস
ইমো নিউ টিপস এন্ড ট্রিকস

কিন্তু পুরো ঘটনা কীভাবে ঘটে? প্রথমে হ্যাকার বা প্রতারক কোনো ভাবে ইমো ব্যবহারকারীর মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে।

তবে এক্ষেত্রে অপরিচিত মানুষকে নিজের কন্টাক্ট তালিকায় যুক্ত করার মাধ্যমে ব্যবহারকারী প্রথমেই হ্যাকার/প্রতারককে সুযোগ করে দেয়। যার ফলে বাকি কাজ হ্যাকারের জন্য হয়ে যায় খুবই সহজ।

হ্যাকার/প্রতারক সেই মোবাইল নাম্বার দিয়ে ইমো অ্যাকাউন্ট লগিন করার চেষ্টা করে। তবে Imo অ্যাপে লগিন করতে গেলে নাম্বার ভেরিফাই করতে হয়।

অর্থাৎ উক্ত নাম্বারে বা লগিন থাকা ইমোতে একটা পিন কোড (OTP) যায় সেটা ব্যবহারকারীর কাছ থেকে জেনে নিতে পারলেই হ্যাকার/প্রতারক তখন ইমুতে ঢুকতে পারে।

আর এই সুযোগটি ইমো ব্যবহারকারীরাই করে দেয়। বিশেষ করে যাদের মোবাইল বা প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা একেবারেই কম। বা যারা সহজসরল মানুষ তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে পিন কোড জেনে নেয়।

আর কোনোভাবে ইমো অ্যাকাউন্ট তাদের ডিভাইসে লগিন করতে পারলেই ব্যবহারকারীর সকল তথ্য তারা পেয়ে যায়।

ইমু হ্যাক হলে কী কী বিপদ হতে পারে?

০১. আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে আপনাকে ব্লাকমেইল করতে পারে।

০২. আপনার পরিচয়ে অন্য কারও কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে।

০৩. আপনার ব্যক্তিগত তথ্য তারা বিক্রি করে দিতে পারে।

০৪. আপনার ইমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ছোট/বড় কোনো অপরাধ করে আপনাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।

০৫. মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়িয়ে আপনার বদনাম করতে পারে।

০৬. আপনার চ্যাটলিস্টে যারা রয়েছে তাদেরকে নোংরা নোংরা ম্যাসেজ পাঠাতে পারে। বিশেষ করে মেয়েদের।

আপনার ইমো অ্যাকাউন্ট যদি হ্যাক হয়ে যায় তাহলে আরও অনেক বিপদ সৃষ্টি হতে পারে।

তবে আমরা একটু সচেতন হলেই সুরক্ষিত রাখতে পারি আমাদের ইমো অ্যাকাউন্ট। এখন আমরা আলোচনা করবো কীভাবে আমরা আমাদের ইমো অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে পারি?

☞ আরো পড়ুন:  ইমু হ্যাক হলে বুঝবেন যেভাবে।

ইমু হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়।

০১. আপনার ইমো অ্যাকাউন্টটি অবশ্যই ব্যক্তিগত কোনো সচল সিম নাম্বার দিয়ে খুলবেন।

০২. ইমোর ভেতর কিংবা সিমে কোনো পিন কোড আসলে তা অন্য কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

০৩. আপনি যে সিমের নাম্বারটি ব্যবহার করে ইমো অ্যাকাউন্ট খুলবেন সেই সিম যদি হারিয়ে যায় কিংবা আপনার কাছে না থাকে তাহলে অবশ্যই সে নাম্বার পরিবর্তন করে সচল কোনো সিম নাম্বার সেট করে নিবেন।

ইমো আইডির নাম্বার পরিবর্তন করার নিয়ম এখান থেকে দেখে নিতে পারেন।

০৪. ইমোতে অপরিচিত কোনো কন্টাক্ট এড করবেন না।

০৫. পারলে Imo Lite অ্যাপ ব্যবহার করুন। ইমো লাইট অ্যাপের সুবিধা হলো এখানে অপ্রয়োজনীয় কোনো ফিচার থাকবে না এবং কোনো বিজ্ঞাপন দেখানো হবে না।

তবে যারা আইফোন ব্যবহারকারী আছেন তারা এই সুযোগ পাবেন না। কারণ আইফোনে Imo Lite অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না।

০৬. আপনার ইমো অ্যাকাউন্টটি অন্যকোনো ডিভাইসে লগিন করা আছে কিনা তা নিয়মিত চেক করুন।

০৭. অন্যথায়, ইমোর মাল্টি ডিভাইস (Multi Device) অপশন বন্ধ করে রাখুন। তাহলে আপনার ইমো অ্যাকাউন্ট একাধিক ডিভাইসে লগিন করা সম্ভব হবে না।

০৮. আপনার ফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করুন। যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করতে পারে এবং ফোনে কোনো ম্যাসেজ আসলে তা যেন দেখতে না পারে।

০৯. প্লে স্টোর এবং বিশ্বস্ত কোনো মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন।

১০. খুব বেশি ব্যক্তিগত ডেটা ইমোতে আদান-প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

১১. আপনার অব্যবহৃত ইমো আইডি চিরদিনের জন্য ডিলিট করে দিন।

আজকের মতো এ পর্যন্তই, ইমোর নিরাপত্তা সম্পর্কে আরও কোনো কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

আর আপনি চাইলে আমাদের Projukti Priyo Community ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন। যেখানে প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়।

50% LikesVS
50% Dislikes

Robin Miah

আমি রবিন মিয়া, একজন সৌদি আরব প্রবাসী। আমার বাসা টাংগাইলের কালিহাতীতে। প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য নিজে জানার জন্য এবং আপনাদের জানানোর উদ্দেশ্যে এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!